#jantarmantar,
#jantar mantar
#the hat
#tourist in jantarmantar
#black and white
#jantar mantar
#the hat
#tourist in jantarmantar
#black and white
শোনো তোমার থাকার জায়গা হয়ে গেছে বুঝলে, সেনা সহায়ক গেস্টহাউসে এ থাকবে, তুমি ওখানে গিয়ে বলবে তুমি কোটা zone এর ডেপুটি সেক্রেটারী, বুঝলে?
রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নাড়ুদার ফোন দেখেই তুলেছিলাম, খবর এর অপেক্ষায় ছিলাম, বুঝলাম এবার আমায় মিলিটারি গেস্টহাউসে থাকতে হবে কোটার মিলিটারি সেকশন এর ডেপুটি সেক্রেটারী হয়ে। কষ্ট করে মাথাটা নামিয়ে নিজের পেট ছাড়িয়ে পায়ের গোড়ালি দেখার চেষ্টা করলাম, হা হতোস্মি, জুতোর ডগাটা পর্যন্ত দেখতে পারছিনা, বেল্ট পড়েছি জানি, সেটাও দেখতে পাচ্ছি না এমন মধ্যপ্রদেশ দেখে কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমি নিজের আত্মরক্ষাটাও করতে পারি, দেশ তো দুরস্ত! তারওপর আমি নাকি ডেপুটি সেক্রেটারী।
কোনোমতে মিঁউ মিঁউ করে বললাম, যদি আই কার্ড দেখতে চায়, তাহলে তো মুশকিলে পড়বো, আর গেস্ট হাউস ওটা দেখতে চাইবেই। নাড়ুদা এককথা বলে ফোন কেটে দিলো, ওটা সামলে নেবো, আমি বলে দেব।
রাজস্থান এ শ্বশুরবাড়ি আমার, শ্বশুরমশাই চাকরি করতেন groundwater ডিপার্টমেন্ট এ। রাজস্থানে মাটির তলার জল খোঁজার সূত্রে নানান মানুষের সাথে ওনার আলাপ, তেমনি একজন হলেন এই নাড়ুদা। সর্বসমস্যার সমাধান স্বরূপ এক মানুষ। সাহায্য করার সুযোগ পেলে জানপ্রাণ দিয়ে (বা নিয়ে) হলেও সেটা করবেনই।
অফিস এর কাজে গুরুগ্রাম এ কিছুদিন থাকবো, দিওয়ালি তে ছুটি আছে, আর একদিন নিলেই টুক করে ঘুরে আসা যায় জয়পুর, শুনেছি ওখানে দিওয়ালিতে আলোয় আলোয় ভাসে শহর।
ইচ্ছে বহুদিন থেকেই যে দিওয়ালি যারা সত্যিই পালন করে তাদেরকে ওই দিন গুলো তে দেখবো। এ বেড়ানো ছিল তাই মানুষ দেখার। আর এক বেড়াকু জানিয়েছিল জয়পুর তো এখন ব্যাপারটা বাণিজ্যিক করে ফেলেছে প্রায়, যাও পুষ্কর। বেশ কয়েকবার রাজস্থানে গেলেও পুষ্কর হয়নি দেখা, এ মহা সুযোগ।
কিছুদিন পর আমার অসুবিধা টা বুঝে নাড়ুদা আবার ফোন করেছে, বুঝলে, তোমার জন্য আমি দারুন একটা ব্যবস্থা করেছি, তুমি সোজা চলে আসবে RMC তে, তোমার নাম বলা আছে, তুমি হলে গুরগাওঁ এর মেডিকেল কলেজ এর ভাইস প্রিন্সিপাল, তোমার জন্যে RMC গেস্ট হাউস এ আমি একটা রুম একদিন এর জন্য বুক করে দিলাম। আমি কিছু বলার আগেই ফোন রেখে দিলো নাড়ুদা, বোধহয় কারোর সাহায্যের জন্য ডাক পড়েছিল। আমি কাছাকাছি মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্ট এর দোকান খোজ শুরু করলাম, অন্তত একটা স্টেথোস্কোপ তো গলায় ঝোলায়, ভুরি টা এবার মানাবে।
সত্যি সত্যি কি হয়েছিল RMC তে বা সেনা সহায়ক গেস্ট হাউসে সে গল্প পরে করবো। আজ বলি আমার দেখার গল্প।
সরাসরি পুষ্কর যেতে বেশ সময় লাগবে ও নিজের গাড়ি নেই বলে ঠিক করেছিলাম জয়পুর এ এক রাত থেকে একটু দেখা ও দেখি করে, পরের দিন আজমের যাবো ট্রেন এ। সেখান থেকে পুষ্কর খুব কাছে। পুষ্কর এর পর ভাববো আজমের এবার দেখবো কি না।
- আমি কাপাস ফুলের মতো উড়বো, শুধু বাতাস আর পৃথিবী জানবে কোথায় আমি নামবো।
জয়পুর এ যন্তর মন্তর দেখা হয়নি আগে, অকারণ এই হয়নি দেখা। এবারে তাই সবার আগে হাঁটা
দিলাম সেপথে।
ইতিহাস জেনে বর্তমান দেখতে চাইনি, চেয়েছি শুধু মানুষ কেমন আছে, থাকে, ভাবে ঘোরে এই ইতিহাস এর বুকে সেটা দেখবো।
যন্তর মন্তর এ ঢুকে মহাকাশ-বিজ্ঞান-মানুষ ভুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম নানান ধরণ এর আকাশ মুখী আকার গুলোর দিকে, সূর্য তখন প্রায় মাঝ আকাশে, ওদের ছায়া ততক্ষনে মাটি তে গেছে গুটিয়ে, অথচ তবুও ওদের আকৃতি গুলো সেই আকাশে ছুঁয়ে কত কি বলছে।
ওই সাড়ে বাইশ ডিগ্রি তেরছা ত্রিভুজ গুলো ও তার সামনে মাটির মানুষরা, দুজনে মিলে রোদের তলায় নানান আলো ছায়ার খেলা খেললো। দেখতে পাওয়ার একটা মজা আছে, যা নেই তাও দেখা যায়, সেই দেখা বড়ো পাওয়া।
আমার মনে হলো ওই জ্যামিতি গুলো, আশেপাশের পাঁচিল, আকাশের রং দেওয়াল মিলিয়ে কত কি বলছে, বলেই চলেছে, সেই কবেকার বানানো আকাশে মাপার যন্ত্রপাতি আজ শিল্প হয়ে গেছে।
তাদের কত আকুতি, কত ঢং, গরিমা, লজ্জা, অহংকার।
এরপর গেলাম হাওয়ামহল, রোদ তখন একটু পর্যন্ত। আশ্চর্য, আবার সেই ঘটনা, দেওয়াল, পাঁচিল, রোদ রং, আকাশ, পায়রা,মানুষ, ছায়া সবাই সেজেগুজে বসে। বা সরে বসে, নড়েচড়ে নানান দৃশ্য তৈরী করছে, আমি এক দর্শক। এ তো বেশ মজা! অনেক্ষন কাটিয়ে তারপর গেলাম zawri বাজার।
আজ এইটুকুই গল্প। জয়পুর এ আমার দেখার পালা শেষ। এ দেখা ছিল, আমার মতো, আমার দেখা, সঙ্গের ছবি তাই সত্যি না বলে হয়তো গল্প বলবে, কারণ আমি কোনো সময় কে ছবি করিনি, এক সময় এর থেকে ছবি করেছি, এ দৃশ্য তাই আপনার ও আমার বানানো হোক, এই আমার ইচ্ছা।
পুষ্কর এর ট্রেন ধরলাম পরেরদিন সকাল এ। জানলার ধার, পশ্চিম মুখ সে জানলায়, পাহাড় তার পিঠ পাল্টাচ্ছে ক্রমাগত। সামনের সারি থেকে ভেসে আসছে দুই আদ্যোপান্ত বাঙালি জোড়া বাবামা ও তাদের কারোর ছেলে-বৌমা-মেয়ের নালিশ আবদার এর লুকোচুরি। নামার সময় ভালো করে আলাপ হলো, ওনারাও যাবেন পুষ্কর, তবে আজ ই আজমের দেখে দিল্লী ফেরার ইচ্ছে। আমি জুড়ে গেলাম ময়রার মাছির মতো। স্টেশন থেকে সিট্ প্রতি দশ তাকে এলাম বাস স্ট্যান্ড, সেখান থেকে ঝকঝকে বাস এ চড়ে, ১৫ টাকা দিয়ে পৌছালাম পুষ্কর। পথে আলাপ হলো সে পরিবার এর ছেলের সঙ্গে। তিনি মোদির দেহরক্ষক, চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো ছিমছাম কমান্ডো, তবে এমন প্রকান্ড দায়িত্বের কমান্ডো হবেন সেটা ভাবিনি। সারএ রাস্তায় আমার প্রথম কোটা প্রশ্ন শুনেই উনি নিজের গল্প শুরু করলেন।
বুকে পিঠে bulletproof জ্যাকেট থাকে কিন্তু হাত পা গেলে কি হবে? সোজা উত্তর, যাবেই না!
সেই যুবক এর মেয়ের জন্ম ও তার পরে ডাক্তার ও হাসপাতাল এর ব্যবসা শুনে আমি থ! যে মানুষ দেশের প্রধানমন্ত্রী কে বাঁচান, তিনি কেমন করে কোনো হাসপাতাল এর হিংস্রতার সামনে পর্যুদস্ত হন তা অবাক করে আমার মতো বোকা কে। ৩০ মিনিটের আলাপ পরে দেখা হবার ইচ্ছে বাড়িয়ে, ফোন নম্বর চালাচালি তে অনেক শুভেচ্ছায় শেষ হলো। ওদের মেয়ে হাসি মুখে আমায় টাটা করে দিলো তার বাবা কে ফেরত দিলাম বলে। ওনারা সদলবলে চললেন। আমি কন্ডাকটর কে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এখানে ধর্মশালা আছে? বলে ওটাই শুধু আছে। সামনের গলি দিয়ে চলে যান একের পর এক পেয়ে যাবেন।
মানুষ ও তার পৃথিবী, তার বিশ্বাস-অবিশ্বাস, এসব দেখবো বলে পুষ্কর এ আসা, যেন হাওয়ায় ভাষা, এমন ইচ্ছা নিয়ে গলির মুখে পা বাড়ালাম।
Comments
Post a Comment