Skip to main content

#Pushkar 2

রাস্তা তখন সুনসান, আমি এক দীর্ঘ রাস্তার শুরুতে, রাস্তা জুড়ে আলোর মালা সাজানো, পুস্কর এ দীপাবলি। আকাশ ঠান্ডা কালো, শুধু কিছু বাদুড় উড়ে বেড়াচ্ছে একটা বোট গাছের আশেপাশে। কিছুটা দূরে দুপাশে কিছু কুকুর খিদে ভুলে থাকার জন্য ঘুমানোর চেষ্টা করছে, তার আর একটু পরেই কিছু বয়স্ক মহিলারা জোট হয়ে দাড়ি। অনুমান করলাম তারাও হবেন চান করতে।
রাস্তার শেষ এ আসবে দীঘি, জানি, তার থেকে দেন দিকে গেলে ব্রহ্মা মন্দির এর পথ ধরবো।গতকাল এর ভিড় ভিড়াক্কা পথ এখন প্রায় নির্জন, কিছু পুণ্যকাঙ্খী আবার আর একটা জায়গায় জোট পাকিয়ে, তাদের কে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম। সমস্ত দোকান বন্ধ, তাদের রোলার শাটার গুলো রাস্তার আলো ধরা-ছাড়া নিয়ে মেতে নানান চেহারা তৈরী করছে। এগিয়ে গেলাম, এক স্বামী-স্ত্রী, বেশ বয়স্ক, দেখি এক মন্দির এর ঢোকার মুখে বসে আছে। রাস্তার আলোর মালা গেরুয়া, তাদের ডজনের সাদাটে সাদামাটা জামাকাপড় ভীষণ ঘরোয়া ওই রাস্তার সঙ্গে। আমিও চুপ করে বসলাম তাদের একটু পেছনে। এক লোভী গরু অনেক আশা নিয়ে এলো মহিলার দিকে, যদি কিছু রুটি পাওয়া যায়, সাধারণত তো পায় সে। ওই অনুপ্রবেশ সহ্য হলো না তাদের, ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, গরুটা কে আড়াল করে, বৌ যাতে হন্তু সামলে আস্তে আস্তে নামতে পারেন, তিনি যে গরু কে পছন্দ করেন না। আরো অনেক গেরুয়া টুনি বালব এর তোলা দিয়ে তারা এগিয়ে গেলেন আর একটু আগে কোথাও কিছুক্ষন বসবেন বলে।
আমি এগিয়ে গেলাম, চোখে পড়লো প্রায় নিকষ কালো অন্ধকার এক গলির ঠিক সামনে এক বিশাল গেট, তার ডানদিকে এক দানবপ্রায় ষাঁড় গোটা ডাস্টবিন ঘিরে দাঁড়িয়ে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি ওটা একটা ঘাট এ যাবার রাস্তা, তখন রাত জেগে, ভালবাম এই অন্ধকার এর সুযোগ নিয়ে চানের অনুভূতির ছবি যদি পাই তো বেশ হয়। কিন্তু সাবধান! ঘাটের ছবি তোলা ব্যারন, একেবারেই বারণ। ঘাটের শেষের প্রায় মুখে দেখি এক শিবের মন্দির এর ছাদ শুরু, তার পাশেই আর বাড়ি সটান উঠে গেছে, মাঝের দলের সঙ্গে এক হাত ফারাক। ওখানে দাঁড়ালে আমি ছবি পাবোই। সবে পা ফেলে ক্যামেরা ঘর থেকে নামিয়েছি, তলায় তাকিয়ে দেখি, সেই মন্দিরের ছাদের ফেনাক দিয়ে নিচে থাকা এক সাধু আমায় দেখেছে, সে দেওয়ালে শিবের জন্য মালা ঝোলাতে যাচ্ছিলো। তেড়েমেড়ে আমায় ডাকলো, ওখানে কি করছিস বলে তুইতোকারির হিন্দি। এস্পার কি ওস্পার ভেবে সটান নেমে গেলাম মন্দির এর দিকে, দেখি সে মন্দির এর সামনে গ্রিল লাগানো, এক ভস্ম মাখা সাধু বসে পুজোর আয়োজন করছে। আমায় এক নজর দেখে পরিষ্কার বাংলায় জানতে চাইলো আমি কথা থেকে, আমার বাটিকের ফতুয়া আর আবছা জবাবই আমার আধার কার্ড হয়ে গেছে তা বুঝলাম।
শুরু হলো আড্ডা, বাবাজি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, বাড়ি ছেড়েছেন বহুদিন, ওনার এখন নাকি আটখানা আশ্রম। এই গোটা পুষ্কর এর গাঁজার সাপ্লাই ওনার আখড়া মানে এই ৩ ফুট বাই ১০ ফুট বারান্দা সময় মন্দির কাম আখড়া থেকে হয়। উনি সোনে পেছনের এক ২ ফুট বই ৫ ফুট খাঁজে।
কিছু পরেই এলেন এক মহিলা, ঘাট থেকে প্লাষ্টিক কুড়িয়ে এনেছেন। পরে জেনেছিলাম উনি সরকারি কর্মী, ঘাট পরিষ্কার করা ওনার কাজ। পুজোর অছিলায়, উনি সঙ্গী হলেন সক্কাল সক্কাল গাঁজার ছিলিমের ভাগের। আমি এক ফেনাক এ চান দেখে এলাম। ততক্ষনে উনি সত্যি বেশ সৎ মানুষ, নিজে বা লোকে ওনাকে আগলে বাবা বলেই চেনে। একটু পরেই  আরো কিছু ভক্ত পরম ভক্তির সঙ্গে ওনার সঙ্গে গাঁজার ছিলিম এ সুখটান দিয়ে সকাল শুরু করলাম। তারপর পাগলা বাবা এলেন ঘাট এ, হাত এ শঙ্খ, যুদ্ধ নিনাদ এর মতো করে শাঁখ এ আওয়াজ তুললেন। সকাল সাড়ে ৫ টায় তার এটা স্বঘোষিত দায়িত্ব বলেই জানলাম। ছবি পেলাম না, মানুষ পেলাম। আরও পাবার আশায় এগোলাম দীঘির পাস্ ধরে, বুঝলাম আজ এই দীঘি কে ছাড় নেই, ঘুরে শেষ করে শুরুতে পৌঁছাবোই।
কি রে চা খাবি, হুঙ্কার দিলো আর এক সাধু আর এক ঘাট এ, বললাম চা খাই না, তো কি খাবি কফি, যায় খাওয়াচ্ছি, তাতেও না বোলাতে হেসে আর্তি, জল খাবি আয়, সরল উত্তর দেই, দেখতে বেড়িয়েছি, আরো দেখে আসছি। আসিস কিন্তু, কথা আছে।
পথে দেখি কিছু মহিলা দীঘি পরিক্রমা করছেন, কেউ খালি হাথে ও খালি পায়, কেউ জুতোর ময় তাকে হাতে আগলে চলেছেন, জল ও গোবর বাঁচিয়ে।
এক বাবা ছেলে ও সঙ্গে ছেলের বৌ বিরক্ত হয়ে আমার যাবার অপেক্ষায় এক ঘাট এ চুপ করে বসে, পরে বুঝলাম, আমি নড়লে বৌ নামবে জলে। আরো কিছুটা এগিয়ে এক ঘাটের প্রায় জলের ধরে খোলা আকাশের নিচে চার ঘাট-পড়শীর আন্তরিক শিব সাধনা চলছে, আমার ডাক পড়লো পেছন থেকে। এক বয়স্ক মানুষ, প্রায় সারা মুখ ভরা সাদা দাড়ি ও চুল নিয়ে হেসে আমায় পশে বসতে বললেন। পশে মিষ্টি হাসি নিয়ে তার দোসর, শান্ত এক মহিলা, সাদামাটা যে কোনো বাড়ির মা যেমন হয়। জানতে চাইলাম, আপনারা এখানে কদ্দিন ধরে আছেন। এই মাসখানেক, ওনারা বাড়ি ছেড়ে বেড়িছেন বছর খানেক হলো, এমনি বেরিয়ে পড়েছেন। হওয়া দাও থাকা সব কিছুই ছেড়ে দিয়েছেন ভগবানের ওপর। বাড়িতে চিঠি পাঠান যখন যেখানে থাকেন।
অবাক আমি প্রশ্ন করি, ভয় লাগেনা, সামনে ঝুকে চোখাচোখি হয়ে জানতে চাইলেন আছে কি যে হারাবো? ভয় কেন পাবো। আছে যার সেই দেবেন। সামনের অশ্বত্থ গাছের ও নাকি ঠিকানা আছে, সেখানে দিব্বো চিঠি আসে বাড়ি থেকে, দুই ছেলে, তারা যোগাযোগ রাখছে, টাকা পয়সা তো চাননা, চোখের আনন্দ দেখি যেকোনো ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এর থেকে বেশি।
দীঘির অন্য প্রান্তে আছে এক ব্রিজ। আপন মনে ব্রিজ এ পা রাখতেই এক সাধু বেশের বিদেশী পুরুষ করা চোখে আমায়ামার জুতোর দিকে আঙ্গুল তুলে সাবধান করে দিলেন। বুঝলাম এই ব্রিজ যে পবিত্র পুষ্কর এর জল ছুঁয়ে রয়েছে, তাই তার ওপর দিয়ে জুতো পরে কেমনে যাবো আমি। গোটা ব্রিজ পাড়ি দিয়ে শেষে  দু পা এগোতেই দেখি সৌম্য এক অল্প দাড়ি গজানো ঋদ্ধ এক ঈষৎ ঘেয়ে রঙের দামি এক শাল পরে উস্ক সকালের বালিশের ওদের দাঁড়িয়ে থাকা চুলে দীঘির হওয়া লাগিয়ে আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, এবং চরম অপরাধ মানে ব্রিজে  জুতো পরেই পেরোনোর উপক্রম করছেন। এই তাকে অভিভাবক এর ভঙ্গিতে মৃদু বকা দেবার মতো করে সাবধান করলাম। হেসেই উড়ি দিয়ে বললেন, অরে ও সব নিয়ম আমাদের জন্য, নিজেরা দেখুন হতচ্ছাড়া গুলো জুতো পরেই ব্রিজ পেড়োবে।
সঙ্গে সঙ্গে আমার আবদার, সময় আছে আপনার, আমার প্রচুর, তাহলে আসুন এই সুন্দর চৌরাশির তলায় আড্ডা মারি। সঙ্গে সঙ্গে উনি রাজি। মানুষ কোথাকার জানিনা, কিন্তু অপূর্ব খোলা, দৃঢ় চরিত্রের মনে হলো তাকে। জানলাম তিনি উচ্ছ মাধ্যমিক আর ভালো করে দিতে পারেননি, সংগীত ও অন্যান্য শিল্প তখন তার নেশা চেয়ে গেছে। চললেন বেনারস তবলা শিখতে, সেখানে পরে আলাপ হলো জয়পুর এর কত্থক শিল্পী দেড় সঙ্গে, শিখলেন নাচ। হেসে উঠলেন পুষ্কর ও ব্রহ্মা নিয়ে, অরে অনেক কাল আগে একরাজা পথ ভুলে এখানে এসে বুঝেছিলেন যা চারিদিকের পাহাড় কে কাজে লাগিয়ে এখানে পুকুর করলে জল আসবে ভালো ও থাকবেও। ব্রহ্মার কিছু দায়ভার নেই এখানে দীঘি বানানোর।
দূরে দেখি তখন কোথা থেকে বেশ কিছু দুঃখিনী কোনো রাজ্যের কিছু মাঝবয়সী মহিলা পুণ্যের প্রচন্ড তাগাদায়, ও জামাকাপড় অতিরিক্ত না থাকায়, প্রায় উলঙ্গ হয়ে চান করে নিলেন! কি স্বাধীন মনে হলো নিজেকে ও আমার দেশ কে তখন! উনি তখন জানাচ্ছে কিভাবে এই জয়পুর ঘাট বিখ্যাত হলে, যাদের হোটেল সেটা করলো, তার এখন কি দুরাবস্থা, টাকা আছে অথচ পরিবার নিঃসঙ্গ।
 মাঝে মাঝে দেখছি যারাই পাশ দিয়ে যাচ্ছেন ওনার হাত ধরে প্রণাম ও আশীর্বাদ নিয়ে যাচ্ছেন।
উনি মাঝে মাঝেই আসেন পুষ্কর এ, থাকেন জয়পুর এই।
সকালের আমেজ মনে ভোরে ওনাকে বিদায় জানিয়ে ফিরতে থাকলাম ধর্মশালার দিকে, পেটকে ভরা তখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
দিনের শুরু আর শেষে আলো বেশ রঙ্গীন, বাকি সময় অনেকটাই সাদামাটা, ওদিকে রাত তার নিজের রং জোড়ে, কালোর সঙ্গে সে রং মজা আনে। রাত বেশ রহস্য, দিন তার সামনে ওই একরকমের সাদা-মাটা। পুস্করে এলে ইটা মনে হবেই। রাত এর পুষ্কর এ দেওয়াল, দোকান, গাছপালা, গলি-ঘুঁজি, মানুষের চোখের আলো সব আরো মেজাজী। হাজি হুজুর এর মতো মাথা নিচু মেনে নেওয়া নয়, নিজের আবেগ নানান রং আর অনেক গান-নাচ-নেশা-ধুয়ো জড়ানো।
সে সব চোখ ভোরে দেখলাম বিকেল থেকে রাত। আবার দেখা হলো সকালের পড়াশোনা ছেড়ে তবলা শিখতে যাওয়া শিল্পীর সঙ্গে। নাম ওনার সুভাষ গউর, ওনাদের পূর্ববংশীয়রা কখনো  বাংলার গৌড় এর মাটি ছেড়ে প্রবাসী হয়েছিলেন। কোথায় যেন সব মাটি মিশে গেলো, নদী হয়ে গেলো সময়।
পুষ্কর কি ও কেন, এর থেকে বেশি এখন বলা মুশকিল, আমার পক্ষে। যখন কি করলাম এ জীবনে, এমন কিছু ভাববো ঘরের প্রিয় কোনো কোণে বসে, তখন মনে পড়বে পুষ্কর দেখেছিলাম বাতাসের সঙ্গে ভেসে।
জীবন যে রহস্য, তার জানার মজা অনেকটাই আছে পুষ্করএর দীঘির পাড়ের সুরে সুরে।
























পুষ্কর এর রাত-গলি
তর্পন
প্রণাম
দীঘি ও রাতের কথোপকথন
ভয়ের ভক্তি
এরপরেও যারা থাকবে আরো কিছুকাল
পাগলা বাবার সকাল ডাকার পালা
যে স্বাধীনতা স্বাভাবিক, আমরা বটে আধুনিক     
ছায়াচিত্র
পুষ্করের নাহান
দীঘির পরিক্রমায়, সকালের দোরগোড়ায়
দিঘি
কোনো মন্দিরের ঢোকার পথে
পুষ্কর এর বর্ণনা, ছেলের বাবাকে।   বৌটি আছে আমার ঘাট ছাড়ার অপেক্ষায় 
নেই যার তার কি ভয় হারাবার
গরিবের খাবার দোকান, সব রঙের অধিকার সবার
যে যেমন দেখে, লেখে আঁকে পুষ্কর এর অলিতে গলিতে
শ্বেতপাথরের ইতিহাস
পাগলাবাবা তার আখড়ায়
গরুড় মন্দির থেকে
দেয়াল ও মেঝে
কিছু আছে, কিছু গেছে
কেউ ভাবে কেউ বোঝে
সকাল
এক ঝলক ভারত
আজকের
থমকে গিয়ে সময়   
পুষ্কর এর এক বৃদ্ধ, যিনি প্রায় ২ মিনিট নিয়েছিলেন শেষ সিঁড়ি পেরিয়ে উঠবেন বলে
পুষ্কর এক রহস্য, দিনেও, রাতেও  

Comments

Popular posts from this blog

Kolkata-25-Jan

   

COC family day

 Be together, be together, come what may, be together. Think about love, think about  time to come, love thy children, and their world. a few photos of the annual family get together in COC family day, 27th September, 2025.

Chennai light and colours

Chennai Love, light, speed, system and love with respect.  Freedom with responsibility.  Colours with fresh air and wonderful morning light.