Skip to main content

মান্ডভী - #Mandvi, #Gujarat coast

দানবের মতো দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে পরের বাসটা বিরতি নিলো যখন, চরৈবেতি ততক্ষনে একটা ফাঁকা বেঞ্চে গুটিশুঁটি মেরে বসেছে। রাত এখন এমন যে দিন হবেই বলে কোনো কথা দেয়া যায়না,  এমনই সে অন্ধকার ও চুপচাপ। বোধহয় আর বাস আসবে না শিগগিরই, অটো ওয়ালা গুলো বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে বাইরে চলে গেলো। বাস এ ঘুম হয়নি ভালো, বসে ঝাকুনি তাও সওয়া যায়, শুয়ে ঝাঁকালে ঘুমানো যায়না, ভাবছে সে তাই এভাবেই বসে একটু ঘুমিয়ে নেবে নাকি। নাকি নিজেকে দেওয়া কথা সেটা নিজেই রাখবে, ভেবেছিলো ভোর রাত এর রূপ দেখবে, যখন বাকি সবাই জানে মানুষ গুলো এখনই উঠবে না, তখন রাস্তা, গাছ, পাখি, আকাশ এরা কি করে, সেটা দেখবে বলে নিজেকে নিজে কথা দিয়েছিলো।
মান্ডভী আগে একবার এসেছে সে, এবার এ আসার কারণ পুরোনো মান্ডভী কে দেখবে চরৈবেতি, যে শুধু সমুদ্রতীর এর এক শহর নয়। যেখানে গত ৪০০ বছর ধরে জাহাজ বানানো হয় যা কিনা ইংল্যান্ড পর্যন্ত কিনে নিয়ে যেত, সেই শহর। সে কি এখন ইতিহাস মাত্র?
অ্যাসবেসটস এর ছাউনির তলায় কংক্রিট এর বেঞ্চ ও ticket counter নিয়ে বাস স্ট্যান্ড, সামনে কটি বাস দাঁড়িয়ে, তার পেছনে পুরোটাই অন্ধকার। অ্যাসবেসটস ধরে রাখার স্টিল কাঠামো তে বসে অসংখ্য শালিখ পাখি। ইঞ্জিন গুলো বন্ধ হবার পরে তাদের আপোষের আড্ডা শুরু হলো উঁচু মাত্রায়। এ এক মজার ব্যাপার, একটু লক্ষ্য করতেই চরৈবেতি ওদের আলোচনা বুঝতে পারলো, কে কার পাশে বসতে চায়, কার গায়ে গন্ধ বেশি, কেউ হয়তো অমুক পাড়ায় যেতে চায়, শুনেছে সেখানে বাঁধাকপির পোকা পাবে বেশি, কেউ নিয়ে যেতে চায় সদ্য উড়তে পারা মেয়েটিকেও।
কাছেই সমুদ্র, ঠান্ডা হাওয়া আসছে, সোঁদা গন্ধ নেই, এখানে কি কেউ মাছ শুকায় না?
পাঁচিল পেরিয়ে তাকাতে দেখলো তারা দেখা যাচ্ছে, শুকতারা কি? শহর এ যে এতো নিচে আকাশ দেখা যায় না, তাই আশা করেনি পাঁচিল এর ওপরেই তারা দেখা যাবে। আর বসে থাকা যায়না, বেরিয়ে পড়লো চরৈবেতি।
বাস স্ট্যান্ড এর আলো ভুল বুঝিয়ে রেখেছিলো, বাইরে তখন আলো ফুটবে বলছে। সুড়ঙ্গের মতো অন্ধকার আকাশে যখন চোখ বুলিয়ে নিচে নামা যায়, তখন, ঠিক সেখানে, বন্ধ দরজার তলা থেকে  আসা আভার মতো কমলাটে লাল , নাকি ঘন লাল, এক আলোর বেড়ি মেলা হয়েছে। চটপট রাস্তা পেরিয়ে ওপর এ যেতে চোখে পড়লো দৃশ্য। মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার মতো উঁচু হয়ে তৈরী হচ্ছে এক জাহাজ, তার মুখ সমুদ্রের দিকে, মনে হয়, সেই মুখের সবচেয়ে শেষে একটা একলা কাঠ আকাশ কে ছোঁয়ার হাত তুলেছে, তার ঠিক ডান দিকে শুকতারা, নাকি ওটা বৃহস্পতি? ডানপাশে সমুদ্রের খাড়ি, ওপারের মসজিদ এর আলো জল এ পড়েছে। ৪০০ বছর আগেও কি এমনি ছিল দৃশ্য?
মাটির দিকে তাকাতে দেখলো পাঁচিল কে আড়াল করে এক বয়স্ক ভিখারি দম্পতি আগুন জ্বেলেছে, ওম নেবে বলে।  তাদের পেছনে পাঁচিলে পোস্টার Malang সিনেমার। নায়িকা নায়ক এর কাঁধে বসে উল্টো হয়ে চুমু খাচ্ছে নায়ক কে। আগুন এর আলো ছায়া বার বার পাল্টাচ্ছে, পাল্টাচ্ছে স্বস্তি পাওয়া গত যৌবন মানুষ দুটি, পোস্টার ও আলো ছায়া পাল্টায়, ছবি পাল্টায় না, দ্বিমাত্রিক যে। আউটওয়ালারা আস্তে শুরু করেছে ওর দিকে, চরৈবেতি কে জানতে হবে সমুদ্র কোন দিকে।
কিছু পরে সে দিক ঠাহর করে রওনা দিলো, পায়ে হেঁটে যাবে দু কিলোমিটার, নইলে দেখা হবে না পুরোনো গলিগুলো। রাস্তায় পেলো গোটা ছয়েক কিশোরী দের, তারা যাচ্ছে স্কুল। লজ্জা পায়না তাদের মধ্যে মোটে দুজন, তাদের সাথে স্কুল এর গল্প, মান্ডভীর গল্প, চরৈবেতি কে জানার গল্প হতে হতে স্কুল এসে গেলো, চারিপাশ তবু অন্ধকার ছড়ানো। কুকুর নেই তেমন। দিশা বুঝে  হাঁটা দিলো সে, সামনে এক গলি, দেয়াল জাপটে দাঁড়িয়ে আছে এক অশত্থ গাছ। বাক ঘুরতে দেখা একলা এক বাছুর এর সাথে। তার অবাক তাকানো আদিম, তেমনি আছে। সে যে চেনেনা চরৈবেতি কে, বাকি সবাইকে সে চিনে গেছে এক মাস এ, এখানে সবাই সবাইকে চেনে। তার অবাক চাউনি, তার বাড়ির পুরোনো দরজার নীল রং এ পাশের ল্যাম্পপোস্ট এর আলোর আভা, চরৈবেতি নিশ্চুপ হয়ে সময় সন্ধিক্ষণ আঁকড়ে ঘিরে নিলো মনে।  নিজের সময় মতো দুধওয়ালা তাকে পাস্ কাটিয়ে বাছুর এর পিঠে হাত বুলিয়ে চলতি পথে bike সামলিয়ে বাক পেরোলো, চরৈবেতি পেছন ফিরে সমুদ্রের পথ ধরলো। মেয়েদের স্কুল এ ছিল নানান পুরোনো স্থাপত্য, ভাঙা মূর্তির টুকরো, ছবি তুলতে দিলো না দারুণ। পাজি কোথাকার। কিছু পরে এলো রাস্তার ধারে গোলগম্বুজ, lighthouse। পুরোনোটি ভেঙেছে, পাশে নতুনটি নিয়ম করে আলো ছড়াচ্ছে। ঝকঝকে সে, নতুন রং করা। যাওয়া যাবে ওপরে? গলি থেকে বেরোনো বৌদি, ময়লা ফেলতে ফেলতে ছোট্ট হেসে না বলে দিলেন।
মান্ডভী সমুদ্রের ধারে যাবার চওড়া রাস্তা করে ফেলেছে, বেশ চওড়া, দুধারে তার বাবলা গাছের পাড়া, সামনে সমুদ্র আছে বোঝা যাচ্ছে। রাস্তা পেরোনো স্কুল শিশু দেড় মতো দানা ছুঁয়ে সে রাস্তা পেরোচ্ছে একদঙ্গল গাঙচিল। সমুদ্র ছেড়ে কোন লোভে তারা উল্টো পথে যাচ্ছে তা জানা নেই, চরৈবেতি শুধু দুচোখ ভোরে সেই বদলাতে থাকা গাঙচিল দের ডানা জোড়া অদৃশ্যসুতো উড়তে দেখলো। আকাশ তখন লাল হয়ে রয়েছে মাটির কাছে, ঠিক যেখানে বাবলা গাছ ও কিছু চম্পা গাছের ডালপালা আছে, তারপর আকাশ রং বদলেছে কমলা থেকে হলুদ ছুঁয়ে হয়ে গেছে নীল।
কোথাও কোনো আওয়াজ নেই, একটা কাক এক গাছের ডগায় বসে চরৈবেতি কে দেখছে, গাংচিল তার চেনা, বিরোধী চরৈবেতি কে? Asphalt কালো মসৃণতায় আকাশের রং পিছলাতে পারে, কিছুটা তবু রয়ে যায় রাস্তায়, ল্যাম্পপোস্ট এবার আলো বোজাবে, সকাল হলো বলে।
মান্ডভীর সমুদ্র বড়ো শান্ত, চিরকাল। এমন শান্ত যে তা মন কে টেনে ধরে বসিয়ে দেয় প্রান্তে, যেখানে আর কিছু চাওয়ার নেই, দেওয়ার নেই।  এবারে সেই সমুদ্র আরো শান্ত লাগলো চরৈবেতির, কারণ কেউ নেই, সে আর শুধু কিছু গাংচিলের দল। সূর্য তখন উঠলো, বালিতে রং ছড়িয়ে, যেখানে বালি ভেজা নেই, জল শুষে গেছে আরো গভীরে, সেখানে তার বিরক্তি। বালির ঢাল উঁচু হয়েছে পাড়ের দিকে, সেখানে দল বেঁধেছে যে কটি দোকানপাট, তাদের কারোর মাথায় পতাকা আছে, তাকে পাশ কাটিয়ে দেখলে সূর্যের দিকে তখন তাকানো যাচ্ছিলো।  চরৈবেতি সেসব ছাড়িয়ে তাকালো জল মুখী। হলদে খয়েরি বালি যেখানে জল পেয়েছে, ধরেছে ওপর আকাশের নীল রং, মাঝে সবজে নীল ঘন গভীর সমুদ্র, তার শেষে আকাশ শুরু, তার রং তখন একটি বাহারি ঘাস চাপান দেওয়া ঝিনুকের বদলানো নীলাভতা। কেউ বোধহয় ভালোবেসে ছাউনি গুলো খয়েরি ঘাস এ ঢেকেছে, মাঝে মাঝে তাদের উপস্থিতি, অনেকটা কাজের শেষের ক্লান্তি বোধের ছাউনি পাবার মতো দূরত্বে। অনেক সময় কাটালো চরৈবেতি, ঘড়ি তে দেখে বুঝলো মোটে কুড়ি মিনিট গেছে। ভোরঘুমভাঙানিয়া রা এসেগেছে ধারে, তারা চা খাবে, পাড়ার ও পরের খবর নেবার আনন্দে তারা এখন ব্যস্ত।
সে এগোলো রাস্তা ধরবে, ঘুরে যাবে, জাহাজ বানায় যারা তাদের বাড়ি কি দেখা যাবে, আজ যে অনেক তারা, তবু যদি হয়!
দোকান পাট শেষ হবার মুখে হটাৎ দেখে, চরৈবেতি, অনেকগুলো গরু চুপ করে দাঁড়িয়ে এক বাড়ির ধারে, যেন কেউ ছেড়ে গেছে তাদের। চোখে কিছুটা ভয়, যেন কি  হয় কি হয় বলছে তারা, বাড়ির দেয়াল জুড়ে দুপাল্লার জানালা, কাছে তার উল্টোপাড়ের সমুদ্র ও সূর্য এসে পড়েছে, অনেক গাংচিল ও দেখা যায় সেখানে। আর কোনো আওয়াজ নেই, শব্দ নেই। বাছুরটি মায়ের পেছনে, আরো আগে আরো কিছু গরু, কেউ জাবর কাটছে না, ডাকছে না। অথচ আকাশ জুড়ে গাঙচিলের ডাক, প্রায় শীৎকারের মতো সে ডাক, তীব্র উল্লাস, তার আকাশ যে তখন কালো রং ছেড়ে উজ্জ্বল নীল হয়ে গেছে প্রায়। এমন নীল সে, যেন তাতে শুধু গাংচিল ই মানায়। বাড়িটি উজ্জ্বল সাদা রঙের, পাশে তেমনি উজ্জ্বল হলুদ রঙের বাড়ি, সবাই বাড়ির ভেতর। গরু গুলো নড়লোই না। চরৈবেতি অবাক হয়ে তাদের কে দেখে গেলো। উঠতে হবে তাকে, এ নৈঃশব্দ বড়ো ভয়ঙ্কর, যেন দেশভাগের মতো মাটি ফেটে যাবে না, কেউ চুপচাপ দাগ টেনে দেবে, হয়ে যাবে এক ভাষার দুটি দেশ।
চরৈবেতি প্রায় দৌড় দিলো বড়ো রাস্তার দিকে, এক স্থানীয় মানুষ ছেড়ে দেবে তাকে বাস স্ট্যান্ড এ। তাকে আজ যেতে হবে ভুজ, সেখানে থাকার কথা। ভুজ যেমন দেখেছিলো ওচৰ সাতেক আগে, তেমন ই কি আছে? অনেক কিছু দেখা হয়নি সেবেলা, ধোলাভিরা দেখার চাপে, কেবল সেই সব দেখবে, সহজ মানুষ ও পুরানো শহর।
ফিরে আসবে সে কাল, বাস ধরার আগে আরো দেখবে, মিশবে জাহাজওয়ালার সাথে। 








Comments

Popular posts from this blog

Kolkata-25-Jan

   

COC family day

 Be together, be together, come what may, be together. Think about love, think about  time to come, love thy children, and their world. a few photos of the annual family get together in COC family day, 27th September, 2025.

Chennai light and colours

Chennai Love, light, speed, system and love with respect.  Freedom with responsibility.  Colours with fresh air and wonderful morning light.