Skip to main content

আমার কলকাতায় আমার দেখা, পর্ব ৩ -

"অনিমেষ, তোমার শার্ট এর ওপর গাছের থেকে নোংরা পড়েছে, বৃষ্টির জলের সঙ্গে এসেছে মনে হয়..."
- এই বলে মাধবীলতা হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে গেলো সুতোর মতো চেহারার অনেক গুলো কিছু, অনিমেষের তখন জবজবে অবস্থা, মাধবীলতা কে একটু কম ভেজা জায়গায় দঁড়াতে দিয়েছে, নিজের ভিজতে বেজায় ভালো লাগছে.

মাধবীলতার আঙ্গুল গুলো অনিমেষের বুকের শার্ট এ গিয়ে চমকে ফিরে এলো, ওগুলো নোংরা নয়, অনিমেষের যুবক পৌরুষত্ব, ভেজা কাঁঠাল চাঁপা হলুদ পাঞ্জাবি ভিজে তারা ফুটে উঠেছে.

পর্ব ৩ -
এমনটি সমরেশ বাবু লেখেন নি কিন্তু আমি নিশ্চিত তারা আমাদের দক্ষিণ লেক এ এসেছিলো, কোনো একদিন ভিজে এরকম ই চমকেছিলো মাধবীলতা. যাদের দুজন কে আমি বারংবার দেখতে পাই কলকাতা জুড়ে, যখন ই যাই.

বৃষ্টি, কলকাতার এক সম্পদ, যখন থাকতাম তখন বুঝিনি, এখন মনে হয় কলকাতার বৃষ্টি কলকাতার নিজের আবেগ, বাড়ি-ঘরদোর-গলি-ঘুঁজি ভালোবাসা ঝগড়া গুলো মানুষের ব্যবহার....বৃষ্টি কলকাতার আবেগের প্রকাশ.
ছোট বয়স এ বৃষ্টি পেয়েছি মাটির কাছাকাছি, ফুটবল খেলে, কাবাডি তে কাদা মেখে. মাঝারি বয়স এ পেয়েছি মাথা তুলে আকাশ দেখে, কলকাতায় তখন বাড়ি ছিল কম, উঁচু বাড়ি আরো দুরস্ত. তও আমি খুঁজে খুঁজে একবার চ্যাটার্জী ইন্টারন্যাশনাল এর ছাদ এ গেছিলাম মনে হয়, বর্ষাকাল এই হবে. কেমন যেন ইতিহাস নিয়ে আসে বৃষ্টি যখন ছাদ এর মতো ঢেকে দে কলকাতা কে.

এবার ও বৃষ্টি পেয়েছি, তবে মাটি তে বসে দেখা সম্ভব হয়নি তা বুড়ো হয়েছি, কমেছে মাঠ, বেড়েছে শিশুদের হাত এ মোবাইল. তাই তাকে সারা গায়ে মেখেছি ছাদ এ গিয়ে, মেয়ের সাথে, আর কলকাতার প্রান্তে গিয়ে দেখেছি যেমন আগে ছিল তেমনকার বৃষ্টি.
তার কিছু আবেগ থাকলো এবারের ছবি গুলোতে...

জ্যামিতিক নিয়ম মেনে আমরা বানাই বাড়ি, পাঁচিল ছাদ আরো কত কিছু, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে এলেমেলো দুরন্ত বিপ্লব মনা মেঘ. যে সব বিকেল এ মেঘ আসে, সেগুলো রয়ে যায় মনে নিয়ম ভাঙার সঙ্গী হয়ে.

এক সময় লেক এর পাশে রেল লাইন পেরোলেই FCI এর গোডাউন থাকতো, প্রসারিত দোচালা তিন এর ছাদ দাঁড়িয়ে থাকতো নিয়ম মেনে, আমার বন্ধুর এত তোলা উঁচু ছাদ এ. উত্তর এ থাকতো লেক, আর দু একটা উঁচু বাড়ি, বাকি চারিদিকএ ছিল আকাশের সামিয়ানা, বৃষ্টি যখন আসছি বলে হাঁক দিতো (টুকি সে বলতো না, টুকি বলে পাহাড় এর বৃষ্টি), সে হুঙ্কার শুনতাম ওই ছাদ এ গিয়ে, সিগারেট আর চিলেকোঠার ছায়ার ভরসায় নিচে নামতাম না.

বৃষ্টি ছিল সব ধুয়ে দেবার সঞ্চয়, মেঘ ছিল তার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স 
এ দৃশ্য তে সেই আগেকার কলকাতা কে দেখেছিলাম, লেক ধার যেমন ছিল....


স্ট্যাম্প আমার কখনোই জমাতে ইচ্ছে করে নি, টাকা লাগতো বলে বোধয়, জমাতাম দেশলাই বাক্স, তাতে থাকতো নানান কারখানা, শহর-গ্রাম এর নাম, ওপর এর ছবি থাকতো নানান কল্পনার উৎস হয়ে. তার ও আগে জমাতাম বাবা মার্ সঙ্গে ঘোরার সময় জোগাড় করা বাস বা ট্রাম এর টিকেট. সে সময় খাট এর মশারি টাঙানোর লাঠি ধরে ঝুলে কন্ডাকটর হয়ে সেই খাট কে নিয়ে গেছি ইকবালপুর বা দমদম. 
চিত্রহার দেখা বারণ ছিল কারণ সেখানে দুটো ফুল পাশাপাশি চলে আসতো বড়ো দের কারণ এ.

তাই আমাদের মন ছিল অনেক ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে, মেঘলা দিন এ আমি তাই হতাম মেঘের পাহাড় উড়তে থাকা চড়তে থাকা বিভূতিভূষণ এর শঙ্কর.
এখন দেখি সেই কল্পনা করাও বড়োই ব্যাজ, সেখানে হনুমান এর মতো দাঁড়িয়ে আছে মোবাইল এর টাওয়ার...কি আর করি, কল্পনা করলাম ওই টাওয়ার এর চূড়োয় বসে আমি আর শঙ্কর গল্প করবো মেঘ ভাল্লুক আর বুনিপ এর মধ্যে কে বেশি ভালো গম্ভীর ভাবে ভয় দেখাতে পারে. জানিনা শঙ্কর বিড়ি খায় কি না, তবে তাকে পেলে আমি আবার বিড়ি খাবো ওই টাওয়ার এর চূড়োয় বসে.

বৃষ্টি পরে যে যেমন দেখে সে ভাবে, আমি দেখি ধীরে ধীরে...
যখন হাওয়াই চটি ছিল সম্বল, বৃষ্টি পেতো মজা, যতই থাকে ছাতা, আমার পিঠ ভিজে যেত আমারি চটির জলের ছিটে তে. 
আর আমি পাতলা চটি নিয়ে ভয় থাকতে যেন ছিঁড়ে না যায়, হাত এ ধরে নিয়ে যাওয়া বড়ো ব্যাজ

তাই এই বৃষ্টি তে চোখ গেলো ওই চটির দিকে, বৃষ্টি আমার চোখ এ ধীরেই নামছিলো, আর সে মেয়ে ছিল ত্বরায়, তাকে নিয়ে আমার আর বৃষ্টির নেই মাথা ব্যাথা, চটির মজা যে আমাদের এখনো একই রকম আছে...


Comments

Popular posts from this blog

Kolkata-25-Jan

   

Chennai light and colours

Chennai Love, light, speed, system and love with respect.  Freedom with responsibility.  Colours with fresh air and wonderful morning light.  

Roof-top picnic