Skip to main content

Nodi

 নদী দু পা জড়ো করে, পায়ের মাঝখানে চটপট গুঁজে দিলো মোবাইল টা, ওকে দ্রুত চুলটা বেঁধে নিতে হবে, প্লাটফর্ম এ প্রচুর মেয়ে এসে গেছে, ১০০ মিটার স্প্রিন্ট এ দৌড়োনোর আগের মতো জায়গা নিয়েছে সবাই, যে মুহূর্তে লোকাল ট্রেনটার মুখটা আর তার একটু আগে ওপরের পেন্টোগ্রাফ দেখা যাবে, মেয়েদের নড়াচড়া শুরু হয়ে যাবে. তার আগেই ওকে চুল বেঁধে মোবাইল শক্ত হাতে ধরে ট্রেন এর দরজায় ঝাঁপানোর জন্যে তৈরী হয়ে যেতে হবে, নইলে ওই জোড়া পায়েই ও পড়ে যাবে পাশের মেয়ের ধাক্কায়. ডোম্বিভিলি বারা ডাব্বা লোকাল এটা, একচুল ভুল করলে হয় ট্রেন এর তলায়, নয়তো দরজার মাঝের রড এ চেপ্টে যাওয়া মুখ নিয়ে থাকতে হবে কিছু সময়. সময় একটু পেলো ও, মোবাইল টাও সেই ফাঁকে ব্যাগ এ গুঁজে দিলো, আজকালকার মোবাইল গুলো আর বুকের ভেতরে ঢোকানো যায়না, যে ছোট করে বার করে নেবে মেয়েদের মাঝে, মুখে তেমন ই একটা না হওয়ার বিরক্তি নিয়ে নদী তখন অভ্যস্ত ঝাঁপ দিয়ে ঠিক ঢুকে পড়লো লেডিস ফার্স্ট ক্লাস এর দরজা দিয়ে ভেতরে. নিমেষের মধ্যে প্রথম পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলো আজ ট্রেন আগেই ভোরে গেছে, উল্টো দিকে গিয়ে মেয়েরা জায়গা নিয়ে নিয়েছে, ভেতরে এ ঢোকাই যাবে না. মারাঠি মেয়ে গুলি athlete প্রায়, অনেক আগে গিয়ে প্রায় ছুটন্ত ট্রেন এ উঠে পড়ে ওরা| চটপট প্রায় ধাক্কা দিয়ে একটি মেয়েকে ধরে ঠেলে দিয়ে ও হেলান দেবার জায়গা খুঁজে নিতে গেলো, ওকে তুমুল ধাক্কা দিয়ে ওর থেকে প্রায় ৩ ইঞ্চি লম্বা একটি মেয়ে জায়গাটা নিয়ে নিলো. ট্রেন ততক্ষনে স্টেশনে এসে থামলো. বাকি ভিড়টা জমা হলো একটু বয়স্ক দের ভিড়ে যারা নদীদের মতো আগেই ঝাঁপাতে পারেনি. নদী জানে, হাত তুলে ট্রেন এর কোনো হ্যান্ডেল ই আর ধরার দরকার নেই এখন এই ভিড় চলবে থানে স্টেশনে অবধি, খুব বড়োসড়ো এক্সিডেন্ট না হলে ওরা কেউই এতটুকুও নড়াচড়া করতে পারবে না, হাত নড়ানো খুবই কঠীন, পড়ে যাওয়া তো দুরস্ত| 


দুমিনিট পর ট্রেন ছেড়ে দিলো, মুখ নির্বিকার করে দরজার ওপরের ফাঁক দিয়ে আসা একটু ঠান্ডা হওয়ার আশ্বাস নিয়ে নদী ভাবলো... কি ভাববে এই ৪৫ মিনিট? 

ছ বছর হয় গেলো মুম্বাই তে, ব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে এখন নদীর মনে হয় ওর শরীরে নিশ্চয়ই অনেক গুলো নাটবল্টু ও গজিয়ে গেছে এইরকম মেশিন এর মতো থাকতে থাকতে| 

পেছনের মেয়েটি কিছু একটা উল্টোপাল্টা পড়েছে, পিঠে খোঁচা লাগছে, কিছু বলবে? এতো দিন হয়ে গেলো তাও ওর মারাঠি বলার অভ্যেস হলোনা, চেষ্টাও করেনি তেমন, আর জানে স্থানীয় রা এটার সুবিধা নেয় যখন তখন, যেখানে সেখানে| চেষ্টা করে পিঠটা একটু সরানোর, ঠিক সেই সময়ে ফোনটা বেজে ওঠে, আজ হাত এ রাখেনি ওটা, ব্যাগটা ঠিক কোথায় আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলো নদী, পাশের লোকজনের চাপে ওটা কাঁধে ঝোলা অবস্থায় পেছন দিকে চলে গেছে, ভাইব্রেশন মোড ও চালু আছে, বুঝতে পারছে নিজের শরীর দিয়ে সেটা|

একটু ডানদিক বাঁদিক  করতে করতে শেষমেশ হাত পেলো ব্যাগ এ, সবাইকে বিরক্ত করে ফোন টা যখন চোখের সামনে তুললো তখন বিরক্তির সঙ্গে অবাক ই হলো| এই সময় মা তো কখনো ফোন করেনা! ভেবেছিলো, অফিস থেকে ফোন এসে থাকবে, একটা মুখঝামটা দেবে সেই সুযোগে, স্পিকার ফোন অন করে নিলো, জানে ট্রেন এ এমন লোক খুব কম থাকবে যে বাংলা জানে, প্রবাসের সুবিধা|

- তুই এখন কোথায়? এতো আওয়াজ কেন তোর ফোন এ?

- আমি তো ট্রেন এ, তুমি স্পিকার ফোনে, কি হয়েছে? তুমি কোথায়?

- বেনারস এ, আসতে পারবি?

- বাবা কই?

- তুই বেনারস এ আয় কালকেই, শুনলি? কালকেই... শুনতে পেলি?

মা এখন whatsapp পারে, কথা তাই কম হয়, খেয়াল হয়নি মার্ সাথে কথা হয়নি প্রায় ৭ দিন হয় গেলো, খেয়াল করে বুঝলো ঠিক কবে শেষ কথা হয়েছে এ সপ্তাহে না তার ও আগে তাও এখন নদীর মনে পড়ছে না| প্রচন্ড ভিড়ের চাপে নড়তে না পারার থেকেও বেশি একটা কষ্ট শুরু হলো নদীর মনে, আফসোস-অনুতাপ আর ভয় মেশানো কষ্ট|





- মা তুমি কোথায়, কি এড্রেস বলবো অটোওয়ালা কে?
সঙ্গের পিঠের ব্যাগটা কাঁধ বদলাতে বদলাতে নদী মোবাইল টা কানে আরো চেপে জিজ্ঞেস করলো মা কে, বেনারস এয়ারপোর্ট এর বাইরে ও তখন দেখছে একটু দূরে কিছু ট্যাক্সি আর অটোরিকশাও দাঁড়িয়ে আছে|
- কোন ঘাট? ওখানে কি করছো?


বেনারস এ পরেরদিন ই আসার কথা ছাড়া মৈথিলী আর কিছুই জানায় নি নদী কে, প্রায় কিছুই না, লোকাল ট্রেন এর সময়ের আন্দাজ করে রাত ৮ টা নাগাদ আবার ফোনে করে জানে যে মেয়ে ফ্লাইট  এর টিকেট পেয়েছে কি না, বাকি প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো অবস্থায় যে নেই তা যেন মৈথিলী ইচ্ছে করেই জোর করে বোঝালো নদী কে| 
এমন সব ভাবতে ভাবতে, অস্সি ঘাট এ এসে অটো ছাড়লো নদী| মার্ বলে রাখা কথা শুনে ঘাটে এসে ফোন করলো মা কে, 


- সোজা নেমে আয়, আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি, ওদিকে যাস না, গোবর বেশি, বাঁ দিক দিয়ে নাম|



ততক্ষনে কৌতুহল, ভয় এমনভাবে চেপে রেখেছে নদী কে যে বিশাল একটা গরু, তার শিং যে প্রায় ঢুকেই যাবে নদীর টি-শার্ট ফুঁড়ে তা নদী দেখেই নি, ভাগ্যিস মা ওখান থেকেই গোবর বাঁচাতে বললো| টি-শার্ট,পেটে গুঁতো, অপ্রস্তুত অবস্থা ও গোবর সব পেরিয়ে এসে দাঁড়ালো মৈথিলীর সামনে নদী, বাঁ হাতে
চিরকালের অভ্যাসে কপালের ঘাম মুছলো নদী, মৈথেলি তাই দেখে মনে মনে ভাবলো এখানে ঘাটগুলোর ও কি নিজস্ব কিছু অভ্যেস আছে? অমিতেশ তাই বলতো কি? নাকি মনেই ভাবতো শুধু?











 - একটু সরো, বাঁ দিকে বসা যাবেনা লোকটা পাজি|

মৈথেলি বাস্তবে ফিরে এসে ব্যাগ হাতড়ে চিঠিটা বার করলো|

 - তোমার কি চেহারা হয়েছে, সকালে চুল আঁচড়াও নি? কোথায় উঠেছো, কবে এলে? বাবা কোথায়? কবে এলে বেনারসে?

মৈথেলি আলতো হেসে চিঠিটা হাতেই চেপে রেখে বললো - চল একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট আছে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে, ওখানে বসি, হোটেলে এখনো উঠিনি, তোর বাবা জায়গা করে গেছে, ওর যে এখানেও বন্ধু থাকবে তা ভাবিনি, ভাবা উচিত ছিল আমার|
কিছু সময়ে মা একদম চুপ করে যায়, অনেক কথা তখন মনে ঘোরে, এই মা কে চেনে নদী, চুপচাপ মার পেছনে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতেই মৈথিলীর হাতে কাগজ টা দেখলো নদী| 











Comments

Popular posts from this blog

Rabindrasangeet in 100 voices - Rehearsal in Chennai

 Rabindranath and his songs, Rabindrasangeet is every Bengali's colour of their culture, essence of their values. Chennai has many Bengalis living their life in a different geographical and cultural world here. A group of people, friends had taken an initiative to sing Rabindrasangeet in a group, a large group rather, counting nearly 80. They will sing 20 songs all together, once, on stage. To do this, with so many members to be in sync, they are practicing for months. This session is one of them.

KGL-Kashmir Great Lakes Trek

 Whatever you say, Things to do before you die, Bucket list, must visit places on Earth...Kashmir remained in all those lists, for me. Then, I have a book, name Witness, a photo book of journalistic photo of Kashmir, images of Kashmir troubles. Interestingly, which the editor of the book also exclaimed, that there is no image of Kashmiri Hindus being fled or extracted from Kashmir. With this complex state of visions, news, anger, frustration, religious bias beneficiaries one thing remain same and true to my existance, that I have to see Kashmir. And I do not want to see tourist Kashmir, I want to see Kashmir as Kashmiris see.  Their, my first step or plan you can say is to have a trek to reach deep inside of Kashmir, where Kashmiris are with Kashmir and themselves. Hence Kashmir Great lakes happened.  Images, I want to speak for themselves, only when I want to say something more of my vision, I have added some notes on top of those images. Curfew sick Daal lake on August 7th, 2022. Thr

Tanjavur - 2023 December end

The evening in Brihadeshwara temple, Tanjavur